শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর: দিনাজপুরে উচ্ছেদ করা অবৈধ ইটভাটা আবারও নতুন করে গড়ে তোলার সংবাদ চ্যানেল আই সহ গণমাধ্যমে প্রচারের পর জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আবারো নতুন অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ডিসেম্বরে ১৪টি অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদ করলেও সেগুলোর অধিকাংশ আবারো নতুন করে গড়ে তোলা শুরু করে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই উচ্ছেদ করা অবৈধ ইট ভাটাগুলো আবারো নতুন করে কিভাবে গড়ে উঠছে তা নিয়ে চ্যানেল আই সহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। ফলে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ৬টি ইটভাটা নতুন করে আবারো ভেঙ্গে-গুড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সেই সাথে ৬টি ইটভাটায় জরিমানা করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।
দিনাজপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশেপাশে অসংখ্য বৈধ-অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। বনের গাছ চুরি করে পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। ইট তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি। ফসলী জমি, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ফসলি জমি ধ্বংস করে ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর ও সারযুক্ত উপরিভাগের মাটি।
এতে করে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। জমি হারিয়ে ফেলছে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা। তেমনি যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব ইট ভাটায় সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার কালো বিষাক্ত ধোয়ায় এলাকার ফসল, গাছ-গাছালি বিনষ্টের পাশাপাশি পরিবেশের চরম ক্ষতি করছে। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বেসরকারী এক হিসেব অনুযায়ী গড়ে প্রতিটি ইটভাটা এক মৌসুমে ৩০ লাখ ইট উৎপাদন করে থাকে। গড়ে ১ ফুট গভীরতায় মাটি কাটা হলে একটি ভাটার জন্য বছরে মাটির প্রয়োজন হয় ১৫ থেকে ১২ একর জমির। সেই হিসেবে অনুযায়ী দিনাজপুরে ১৬০টি ইটভাটার কাজে ব্যবহারের জন্য বছরে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার একর জমির মাটি কাটা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির উপরিভাগে যে গুরুত্বপূর্ণ জৈব পদার্থ থাকে তা নীচের মাটিতে থাকে না।
জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হলে আগামী ২০ বছরেও সেই জমির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ হবে না বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. শাহাদৎ হোসেন খান লিখন।
সরকারি কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ৩ ফসলী জমি, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঝেই গড়ে উঠেছে ইট ভাটা। এসব ইট ভাটার নেই কোনো পরিবেশের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স। তার পরও বিভিন্ন কৌশলে তা চলছে। উচ্চ আদালতের মিথ্যা আদেশ দেখিয়ে ইটভাটা চালানোর অভিযোগে প্রায় অর্ধশত ইটভাটার মালিক জেল-হাজতও খেটেছেন। মামলারও চলছে বেশকয়েকজন ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। বীরদর্পে এর সত্যতাও স্বীকার করছেন, অবৈধ ইটভাটার মালিকরা।
বিষয়টি নিয়ে চ্যানেল আইসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রচার হয়। অবশেষে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মাঠে নামে পরিবেশ অধিদপ্তর। ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর গেল বছরের ডিসেম্বরে ১৪টি অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছে এবং ১০টি ইটভাটাকে ৪৩ লাখ টাকা জরিমানা করে। সেগুলোর অধিকাংশ আবারো নতুন করে গড়ে তোলা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই উচ্ছেদ করা অবৈধ ইট ভাটাগুলো আবারো নতুন করে কিভাবে গড়ে উঠছে,তা নিয়ে চ্যানেল আই সহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এতে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আবারো নতুন অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত দু’দিনে (১১ থেকে ১২ জানুয়ারী’ ২০২১) দিনাজপুরের সদর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী ও বিরামপুর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে অভিযান চালিয়ে ফলে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ৬টি ইটভাটা নতুন করে আবারো ভেঙ্গে-গুড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সেই সাথে ৬টি ইটভাটায় জরিমানা করেছে, ১২ লাখ টাকা। অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর হস্তক্ষেপ নিচ্ছেন, বলে জানিয়েছে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসান।
পরিবেশ বাাঁচাতে দীর্ঘদিন পর হলেও এবার টনক নড়েছে প্রশাসনের। মাঠে নেমেছে অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদে। এই কার্যক্রমকে সাদুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। তবে চলছে ভাংগা-গড়ার খেলা। কোনো অদৃশ্য শক্তি’র ইশারায় যাতে এ অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযান মাঝপথে থেমে না যায় এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দিনাজপুরবাসী। বিডিটুডেস/এএনবি/ ১৩ জানুয়ারি, ২০২১