জান্নাত, স্টাফ রিপোর্টার (চট্টগ্রাম): “উই” বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় নাম। এটি মূলত একটি ফেসবুক গ্রুপ। Women and E-commerce Forum-WE এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো উই। এটি একটি ফেসবুক বেজড ই-কমার্স গ্রুপ। ই-ক্যাব এর ফাউন্ডার রাজীব আহমেদ এর উপদেষ্টা এবং এর প্রেসিডেন্ট হলো নাসিমা আক্তার নিশা।
দেশের প্রত্যেকটা অঞ্চল থেকে এমনকি প্রান্তিক এলাকা থেকেও নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই গ্রুপ এর মাধ্যমে তাদের দেশীয় পণ্য নিয়ে নেওয়া উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই উই এর মাধ্যমে। বর্তমানে গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ১ মিলিয়নের বেশি।
শনিবার দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম মোমিন রোডস্থ স্যাফরোন রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হলো “উই” এর মিট আপ প্রোগ্রাম। চট্টগ্রামের নারী উদ্যেক্তারা একত্রিত হয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে উইয়ের চট্টগ্রাম টিম। এই অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে এসেছিলেন উইয়ের মাধ্যমে সফল ব্যবসায়ী ও উই এর জয়ী পুরুস্কারপ্রাপ্ত রাঙামাটির উদ্যেক্তা “শিরিন সুলতানা অরুণা”, যিনি মূলত কাজু বাদাম নিয়ে কাজ করেন।
তার উদ্যোগ এর নাম “এস এস এগ্রো প্রোডাক্টস”। তিনি তার নিজ উদ্যোগে এই মিট আপ এ অংশগ্রহণকৃত সকলের জন্য রাঙামাটি থেকে উলের উত্তরীয় এবং কাজু বাদাম উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালভাবে উদ্যেক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য যোগ দিয়েছিলেন উইয়ের প্রেসিডেন্ট অনন্যা পুরুস্কার (২০১৯) প্রাপ্ত নাসিমা আক্তার নিশা। চট্টগ্রাম থেকে উইয়ের মডারেটর অর্পিতা বড়ুয়া এবং ফেরদৌস আক্তারের উদ্যোগে আয়োজিত হয় এই মিট আপ প্রোগ্যাম।
উই পরিবারের সদস্য জান্নাতুল নাঈম জেরি বলেন, “আমি মূলত ২০১৮ সাল থেলে কাজ করলেও কোনো মেন্টর পাইনি। উই তে এসে রাজীব আহমেদ স্যার এর পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে প্রায় মুষড়ে পড়া উদ্যোগে প্রাণের সঞ্চার ঘটাতে পেরেছি। আমার মতো অনেকে নিজেদের ভেতরের শক্তিকে আবিষ্কার করতে পেরেছে এবং সফলতা পেয়েছে। কিভাবে লেগে থেকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে হয়, তা প্রতিনিয়ত শিখছি।
তাছাড়া রাজীব স্যার এর দেওয়া আইডিয়াগুলোকে কাজে লাগিয়ে খুব অল্প সময়ে অনেক বেশি সুফল পেতে শুরু করেছি।” তিনি কি নিয়ে কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, তিনি মূলত উলের সুতা নিয়ে কাজ করছেন। উলের সুতার তৈরি বিভিন্ন গহণা, ক্র্যাফট এর কাজ তিনি নিজ হাতে করেন এবং ছেলেদের গেঞ্জি কিংবা মেয়েদের দেশীয় পোশাক ও রয়েছে সাথে।
উই পরিবারের অন্য একজন সদস্য মালা চৌধুরী এ সময় বলেন, “উইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা (উদ্যোক্তা) জীবনে যে ধরণের বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন সেই সব বাঁধার সম্মুখীন যেন অন্য কোনো উদ্যেক্তাকে না হতে হয়, উদ্যেক্তাদের সঠিকভাবে পথ দেখানোর চিন্তা থেকেই উইয়ের জন্ম। আজ এই পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।”
এই মহামারীর সময়ে উইয়ের হাত ধরেই লাখপতি হয়েছেন অনেক উদ্যেক্তা। জিনাত সুলতানা উইয়ের চট্টগ্রাম থেকে প্রথম মিলিনিয়ার কাজ করছে মসলা নিয়ে, এছাড়া অন্য মিলিনিয়ার আসমা চৌধুরী কাজ করছেন বাটিক পণ্য নিয়ে। অর্পিতা বড়ুয়া এগিয়ে চলেছেন বিলুপ্ত হওয়ার পথে হ্যামক পণ্য নিয়ে। আসিফা বিনতে মোশারফ কাজ করছেন স্বাস্থ্য সম্মত ঘরে তৈরী খাবার নিয়ে। দুই বন্ধু প্রমিত চৌধুরী আর দীপ বণিক কাজ করছেন শুঁটকি নিয়ে। মালা চৌধুরী কাজ করছেন হাতে তৈরী গয়না আর হোমমেড চকোলেট নিয়ে।
উই যে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে, তা প্রোগ্রামের সকলের আউটফিট দেখে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিলো, কেউ জামদানী শাড়ি পরে এসেছেন, কেউ জামদানী পাঞ্জাবী, কেউ বাটিক এর শাড়ি, কেউ থ্রি-পিস, মোট কথা যে যেই পণ্য নিয়ে কাজ করে, নিজেকে সেই পণ্যের এম্বাসেডর হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করেছেন। এভাবেই ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের পথপ্রদর্শক হয়ে আছে উই। বিডিটুডেস/এএনবি/ ১৪ নভেম্বর, ২০২০