বিডিটুডেস ডেস্ক: কথায় আছে- যার জ্বালা সেই বুঝে অন্যে বুঝবে কী। আসলেও তাই যার বাত ব্যথা সে ছাড়া কেউ বুঝবে না যে, বাত ব্যথা কী যন্ত্রণাদায়ক। বাত অস্থিসন্ধিতে হয়, মাংসপেশিতে হয় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। ঔষধে এ জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে অনেক সময় মুক্তি পাওয়া যায়। আবার খাওয়া দাওয়া নিয়ন্ত্রেণেও কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। বাতকে ধনী লোকের রোগ বলে। কারণ, এই রোগের সাথে সমৃদ্ধ খাদ্য ও পানীয়ের যোগাযোগ বা সম্পৃক্ততা আছে।
বর্তমান যুগে মোটা মানুষের সংখ্যা বেশি দেখা যায়, তাই তাদের বাতের আক্রমণও অনেক বেশি হয়ে থাকে। যদিও মধ্যবয়সী ও মেয়েদের মেনোপজের পর বাত বেশি হয়। মোটা মানুষের যৌবনেই বাতে ধরতে পারে। আবার স্বাভাবিক ওজনের মানুষেরও বাত হতে পারে। আবার বংশগতভাবেও কারো কারো বাত ব্যথা হয়। কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়ও বাত ব্যথা হয়। কিডনি রোগী, হার্ট ফেইলিওর রোগীদের বাত ব্যথা হয়।
বাতের লক্ষণসমূহ:
আমাদের রক্তে সবারই ইউরিক এসিড আছে। কিন্তু এর পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, তখন ব্যথা, জ্বালা-যন্ত্রণা দেখা দেয়। বিশেষভাবে শরীরের গিঁটে গিঁটে ব্যথা, অস্থি সন্ধিতে ব্যথা হয়। কারণ, অস্থি সন্ধিতে Crystal জমতে থাকে। শরীর এই Crystal level 1.0 mg অথবা এর বেশি থাকে তখন বাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের দৈনন্দিন কিছু খাদ্য ও পানীয় ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কিডনি তখন ওই অধিকতর পরিমাণ ইউরিক এসিড ফিল্টার করতে পারে না। ফলে দুর্ভোগ বাড়ে।
খাদ্য সম্পৃক্ততা:
বিভিন্নরকম খাদ্য বাত ব্যথা বাড়ায় ও কমায়, ইউরিক এসিড বৃদ্ধি করে আবার কমায়। কোনো কোনো গোশত ও সামুদ্রিক মাছ শরীরে ইউরিক এসিড বাড়ায়। যেসব বেভারেজে অ্যালকোহল মিশ্রিত থাকে বা সোডা থাকে, সেসব বেভারেজ শরীরে ইউরিক এসিড বৃদ্ধি করে। কেন এসব বাড়ায় তা অজানা। সোডার কথা বলা যায়। এতে সাধারণত চিনি থাকে।
আবার উচ্চ মাত্রায় Fructose corn syrup থাকে। এটা ইউরিক এসিড বাড়ায়। কৃত্রিম মিষ্টকারী বস্তু বা উপাদানও ইউরিক এসিড বৃদ্ধি করে। বেশি মাত্রায় নিম্নমানের ননীযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্যও বাতের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং ইউরিক এসিড কমায়। বাতব্যথা কমায়। শরীরে কোথায় বাত আক্রমণ করে সাধারণত পায়ের গোড়ালি, গিঁট, হাতের কব্জি ও কনুইতে বাত আক্রমণ করে। মোটামুটি শরীরের অস্থি সন্ধিতেই বাত বেশি ধরে।
যারা বাত ব্যথা থেকে সুরক্ষা পেতে চান তারা প্রাণীর লিভার, কিডনি কলিজা ও গিলা খাবেন না। সর্বপ্রকার মিষ্ট অ্যালকোহলজাত দ্রব্য বর্জন করবেন। সব ধরণের বেভারেজ এডিয়ে চলবেন। ধূমপান বর্জন করবেন। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রেণে রাখবেন।
উচ্চমাত্রার প্রোটিনযুক্ত খাবার বর্জন করবেন। দৈনিক ৪ থেকে ৬ আউন্সের বেশি কোনো লাল গোশত (ভেড়া, খাসি, গরু) খাবেন না। পাখি, মোরগ-মুরগি, হাঁসের গোশত এক টুকরো। সীমিত পরিমাণে ফলের রস পান করবেন। মাদকদ্রব্য, মদ, অ্যালকোহল নিষিদ্ধ। লবণ, চিনি, মিষ্টকারী দ্রব্য অতি সামান্য খেতে পারেন।
যেসব খাবার খেতে পারেন:
১. শাকসবজি, লতাপাতা, আটা ইত্যাদি;
২. ডিম খেতে পারেন;
৩. দধি ও দুগ্ধজাত দ্রব্য যাতে চর্বি কম;
৪. ৮ থেকে ১৬ গ্লাস পানি;
৫. ননিবিহীন বা কম ননিযুক্ত দুধ খেতে পারেন;
৬. শর্করা বা চিনি বা মিষ্টকারী দ্রব্য ছাড়া চা বা কফি পান করতে পারেন;
৭. মিষ্টবিহীন ফল খাবেন।
উপরোক্ত বিষয়াবলী মেনে চললে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে সুস্থ থাকতে পারবেন। বিডিটুডেস/এএনবি/ ১৯ জানুয়ারি, ২০২১