জি এম মিঠন, নওগাঁ: নওগাঁয় বারোমাসি কার্টিমন আমের বাগান করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন আলহাজ্ব আজিজুল হক। আর সেই স্বপ্নকে তিনি বাস্তবে রুপান্তর করতেই রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন মনোমুগ্ধকর একটি আম বাগান।
তার পরিশ্রমের কারণেই এসময়েও তার বাগানে গাছে গাছে আমের সমারহ। নতুন জাতের এই আমের ভরে নুইয়ে পড়েছে গাছের ডাল। মাত্র ১০ মাস বয়সেই আম গাছগুলোতে এসেছে ফলন। এর মাঝেই তিনি দুই দফা আম বিক্রি করেছেন।
আম বাগানের মালিক আজিজুল হক জানান, দীর্ঘদিন থেকে আমের বাগান করার স্বপ্ন দেখতেন। সেই ভাবনা থেকেই গড়ে তোলেন আমের বাগান। বাড়ির পাশে প্রসাদপুর মাঠে আড়াই বিঘা জমিতে ৫১৪টি আমের চারা রোপন করেন। জমি প্রস্তুত করা, চারা লাগানো ও জমির চারপাশে বেড়া দেয়াসহ খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা। পরবর্তীতে মানুষ ও গরু-ছাগল থেকে ফসল রক্ষা করতে জিআই তারের বেড়া দেওয়ায় অতিরিক্ত আরো ৫০ হাজার টাকা বেশি গুণতে হয়েছে তাকে।
তিনি আরো জানান, পাশের গ্রামের এক নার্সারি মালিক চুয়াডাঙ্গা থেকে মাতৃগাছ নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ১১০ টাকা পিচ চারা সংগ্রহ করেন। দশ মাস বয়সে প্রতিটি গাছে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ১০টা পর্যন্ত আম ধরেছে। গত বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে আমের গুটি একটু কম এসেছে। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি গাছে ওষুধ স্প্রে করছেন।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে বাগান করে প্রথম বার ১০মাস বয়সে ৩শ টাকা কেজি দরে কিছু আম বিক্রি করেছেন। গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় বার ৪০ কেজি আম বিক্রি করেন। প্রতি মন আমের মূল্য ১২ হাজার টাকা। ১৫-২০ দিন পরে আরো প্রায় ২০ কেজি আম বিক্রি হবে হলে আশা করছেন। দুই বছরের মধ্যে আম বাগানের সম্পূর্ণ খরচ উঠে আসেবে।
দুই বছর পরে তেমন কোনো খরচ হবে না। একটি আম গাছ ২০ বছর পর্যন্ত ফল দিবে। প্রতিটি গাছেই কম বেশি আম ধরছে। অনেক গাছে নতুন করে মুকুল আসছে। কোনো কোনো গাছে ইতিমধ্যে মুকুল থেকে আমের গুটিও দেখা দিয়েছে। সেই আম আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। এখন আজিজুল হকের চোখে সফলতার রঙিন স্বপ্ন। সাধারণত অষ্ট্রেলিয়া ভারত সহ বেশ কিছু দেশে বারোমাসি আমের চাষ হলেও বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।
বারোমাসি আম বাগানের মালিক আলহাজ্ব আজিজুল হকের বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার ইশ্বরলক্ষীপুর গ্রামে। গ্রামের পাশের ছোট একটি বাজার যার নাম পাঠাকাটা বাজার। সেই বাজারেই গড়ে তুলেছেন তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, রড, সিমেন্ট, লোহা ও টিনের দোকান।
ব্যবসা ভালোই চলতো কিন্তু কোনো কিছুতে ব্যবসায় তার মন বসতো না। দোকান ছেলের হাতে দিয়ে বারোমাসি কার্টিমন আমের বাগান করেন। বাগান করার পর ১০ মাস পরিশ্রম করে সফলতা তার হাতে এসে ধরা দিয়েছে। তিনি এখন একজন সফল বারোমাসি আম চাষি হিসেবেই এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই তিনি আম বাগান বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছেন। আগামিতে ১০ বিঘা জমিতে আম বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। আজিজুলের মতে, ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা স্বপ্ন নয়, যে স্বপ্ন মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। সেটাই প্রকৃত স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকেই তিনি বাস্তবে রুপ দিয়েছেন।
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় জানান, বাংলাদেশের মানুষকে কীভাবে ফল নির্ভর করা যায় সেই পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। বিভিন্নভাবে ফলমূল চাষ করে ভাতের ওপর থেকে চাপ কমাতে হবে।
আমের ভরা মৌসুমে আম চাষিরা দাম পান না। কারণ এ সময় আম একসাথে বাজারে ওঠে। কৃষি বিভাগ থেকে নতুন জাত বারোমাসি কার্টিমন আম সম্পপ্রসারণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বিডিটুডেস/এএনবি/ ১৪ নভেম্বর, ২০২০